Rahmatullah Roche
রহমতুল্লাহ রচি
Rumi bangla Anubad ( রুমির কবিতার বাংলা অনুবাদ )
১.
এইতো যে কথা আমি ভেবেছি দিনভর,
নিকষ নিশীথ রাতে চাইছি উত্তর-
কোথায় ছিলাম আমি? কেন এ জনম?
জানি না তো আমি জানি না।
আত্মার আধার ছিল অন্য কোথাও
সেখানেই হোক তবে তার সমাপন।
যে শুঁড়িখানায় শুরু এ মাতলামি
সেইখানে ফিরে গেলে কাটবে এই ঘোর
মাঝখানে বসে আছি খাঁচার পাখির মত
আর তো কটা দিন, আবার উড়ব আমি।
বল তবে কে শোনে
কানে কানে
আমারই গলার স্বর, আমারই বাক্যগুলি?
আমার মুখ বলে অন্য কারো বুলি!
কে দেখে আমার চোখে? কে বল সেই জন
সদাই শুধায় সে কথা অস্থির এই মন
পাইতাম যদি তার এক ফোঁটা উত্তর,
ভাংতাম এই খাঁচা, কাটত মাতাল ঘোর।
আমি কি এখানে এসেছি স্বেচ্ছায়?
এবং জানি না কেমনে ফেরা যায়,
নিয়ে এসেছ মোরে তুমি যে এ ধরায়
দয়াময়, পাড়ে লয়ে যাও আমায়।।
-রুমি
(Coleman এর ইংরেজী অনুবাদ থেকে ভাবানুবাদ - রহমতুল্লাহ রচি )
একটি প্রেমের(অথবা কাপুরুষতার কবিতা)
হৃদয়ের ছাপাখানা চলছে এখনো।
নাও, যদি পার (কাপুরুষ আমি)
গলা টিপে কেড়ে নিতে প্রকাশের ভাষা।
কাপুরুষ হয়ে বেঁচে আছি, তবু জেনো-
তোমাকে দেইনি আজও করোটির ইজারা।
লাগাতার চোরাবালি, আমরা জানি না-
কোন পথে যাব, কোন পথে যেতে হবে।
জ্যান্ত-পোড়া ছাই আর রক্ত দিয়ে খেলে-
কুৎসিত এই হাত কোথায় লুকাব?
অনামিকা ত্রয়ী
লাজ-লজ্জা বিক্রি করে দিয়ে
আদিম খোঁড়লে ঢুকে পড়ি,
সুবিধায় সহজেই দ্রবীভূত চেতনা
কী করি আমি কী করি!
*
অস্তিত্বের জল গড়িয়ে এক সময়
সাগরে মিশবেই এই সব;
উদ্বায়ী যতখানি বাষ্প হয়-
তাও ফিরে আসে নামলে আঁধার।
**
নক্ষত্রের বিষ নামে
আত্নার নেটওয়ার্ক ফুঁড়ে
যেভাবে কাটছে দিন
নাগালের ছন্দহীন সুরে
***
নিস্তব্ধ আর্তনাদ
যখন আমার দুঃখ করার শক্তি ফুরিয়ে যায়-
পুড়ে যাওয়া সলতের শেষ টুকরোর মত,
যখন আমার হৃদয় আর দুঃখের ভার নিতে
পারে না, বিদ্রোহ করে বলে - আমি কি
গাধার মত ভারবাহী? তখন অসহ্য শূন্যতার
দেয়াল আঁকড়ে ধরে চেতনা, অনুভূতিগুলো
ক্ষয়ে শেষ হয়ে যাবার আগে করে ব্যর্থ
আর্তনাদ - আমি কি বেকার যুবকের জুতার
শুকতলা? জন্মান্ধের মত চোখ তার দৃষ্টি
খুঁজে বেড়ায় - কুয়াশার মত ঘিরে আসা
ভয়ানক নির্বিকারতার মাঝে, অক্ষম আক্ষেপ
দলা পাকিয়ে গুমরে ওঠে বুকের গভীরে,
বলে- আমি কি ঝরা পাতার গাঢ় দীর্ঘশ্বাস?
তাই কিছুতেই কিছু আসে যায় না আমার ।
দহন
আমার এ দেহে বাস করে একটা বিরাট পোকা
কুরে কুরে খায় আর বলে, বোকা, যুদ্ধে যাবে?
কে তুমি?
কে তোমার মাতৃভূমি?
কোন খেলাতে রাখলে জীবন বাজি?
আমার এ দেহে বাস করে একটা বিরাট আগুন
হৃদয় জ্বেলে জ্বলছে ধিকিধিকি, তার আঁচে-
উত্তাল হয়ে রক্ত কণা বলে,
আর কতকাল বন্দী হয়ে বাচি?
দেশ দিয়েছে প্রেমের আগুন জ্বেলে,
কি আর করা ঝাঁপ দিয়েছি পোকা।
ভুল বোঝাবুঝি
স্বপ্নগুলো ছিল আরো স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা
স্বপ্নডানা মেলেছিল স্বপ্ন শাবকেরা
ক্লান্ত পায়ে ফিরে গেছে বন্ধ ছিল দোর,
মিথ্যে সবকিছু, এ যেন মিথ্যের শহর।
যে স্বপ্ন মিশে আছে থরের হাতুরিতে
অনন্তের গানে ভরা ক্ষণিক এই রাতে
মিথ্যায় ডুবে গেলে তোমার অধর-
মিথ্যে সব স্বপ্ন, এ হল মিথ্যের প্রহর।
আমি শুধু বারবার ভুল পথে গেছি,
অথবা কিছুই নয়- এ শুধু একবার
ছিল ভুল বোঝাবুঝি।
পদ্মা নদীর কাছে
তোমার ঐ পানির ঘোলা ঘূর্ণিতে
কী কর গোপন?
কী রহস্য-
যার লাগি পরাণে জাগিল
কতদিনের অপার আকর্ষণ!
তোমার ভরাট দেহে ঢেউয়ের
উথাল যৌবন,
সাধ ছিল-
জন্ম-জন্মান্তরে ঠিকই
একদিন হবে আলিঙ্গন।
সাদাসিধা কথা
ভেসে যেতে ভালোবাসি এই নদী টানে,
হৃদয়ের দোর যদি খোলে জলা ঘ্রাণে;
স্বপ্নাকাশে আধো চাঁদ, তারি পানে চেয়ে-
প্রবল প্রাণেতে জাগি, কিম্বা অভিনয়ে।
আমার এ রাত্রির আছে অমানিশা,
সা৺ঝের তারার মতো বিষাদের ভাষা।
ভেজা হাওয়া নাড়া দেয় চেতনা শেকড়ে,
হৃদয় ভাঙে ও গড়ে হৃদয়েরই ঝড়ে।